You are currently viewing ঢাকায় টই টই

ঢাকায় টই টই

পড়াশোনার সুবাদে আমি এখন ঢাকার বাসিন্দা। থাকি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে।ব্যস্তময় এই জীবনে স্বভাবতই নিজেকে সময় দেওয়া ও মানসিক প্রশান্তির চর্চার সুযোগ খুব সীমিত। তাই,যতখানিই সম্ভব-নিজেকে ব্যস্ত রাখি নতুন কিছু জানা ও চর্চার ভিতরে।এ ক্ষেত্রে ভ্রমণের চেয়ে ভালো সহায়ক আর কিছু হয় না।

০৭ ই ফেব্রুয়ারী,২০১৯ ; রমনার সকাল – বিকেল

ভাবুন তো- কোনো এক পাতা ঝরা শীতের শেষের দিকে নরম রোদ মাখা সকালে শহরের রুক্ষ প্রকৃতির সাথে সাথে আপনার মনও খুব খারাপ। এ সময় একটু প্রকৃতির সানিধ্য পেতে আপনার ইচ্ছে করছে। আবার হাতে বেশি সুযোগও নেই শহর থেকে দূরে কোথাও যাবার। এমন অবস্থায় শহুরে কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে আবার শহরেরই বুকে মাথা রেখে শান্তির পরশ পেতে রমনা পার্কের মত ভালো আর কিছু হয় না। ভার্সিটি থেকে খবর পেলাম সেদিন ক্লাস হবে না। আমায় আর থামায় কে ? নাস্তা করে বেড়িয়ে পড়লাম রমনার উদ্দেশ্যে। ঢোকা মাত্রই চোখে পড়লো নানান বয়সী মানুষের এক সাথে সকালে শারীরিক কসরতের চিত্র। একটু সামনে এগোতেই শতবর্ষী গাছ গুলোতে নানা রকম পাখির কলতান কানে ভেসে আসতে লাগলো। মুহুর্তেই মন টা ভাল হয়ে গেল। ক্লান্তি না আসা পর্যন্ত হেঁটে জানা অজানা অনেক গাছ লক্ষ্য করলাম। সেই সাথে পাখি। বিশ্রাম নিতে এবার পার্কের বেঞ্চে বসে আকাশ দেখছিলাম আর আকাশ কুসুম চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ পিঠে হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখি আমার প্রিয় মানুষ টিও আমার মান ভাঙাতে পার্কে এসে হাজির। এবার পলাশের লাল রঙের মতই মনে আবীর খেলে গেল। বেশ খানিক টা সময় কাটানোর পর সিদ্ধান্ত নিলাম দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আবার বিকেলে পার্কে আসবো।

যে কথা সেই কাজ । হালকা কুয়াশাময় বিকেলে এসে দেখলাম পার্কের পরিবেশ সস্পূর্ণই ভিন্ন। জনস্রোত দেখে মনে পড়ে গেল পহেলা বৈশাখের বটতলার কোনো চিত্র বুঝি । প্রচুর মানুষ, সেই সাথে সমান তালে চলছে ফটোসেশন। তবে প্রচুর দর্শনার্থীদের সাথে থাকা পানির প্লাষ্টিকের বোতল আর খাবার প্যাকেট পার্কের সৌন্দর্য হরণে সব চেয়ে বেশি দায়ী। টোকাইয়ের দল যা পারছে- কুড়িয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রতি বর্গ ইঞ্চি মাটি আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্ব। মটির শরীর টা প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিয়মে মাটির সাথে মিশে যাবে। ভ্রমণের সময় এই মাটি ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। তাই এক ইঞ্চি মাটিও যেন আমাদের নিজেদের অবহেলা ও গাফিলতিতে নষ্ট না হয়,সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার সময় এখনই।

মার্চ,২০১৮; শ্রীশদাস লেন,বাংলাবাজার, ঢাকা

ভারতবর্ষ বিভাগের আগে সুধীর দাশ নামক এক জমিদারের বাড়িতে দৈনিক সোনার বাংলা পত্রিকার কার্যালয় ছিল।১৯৫১ সালে পত্রিকা অফিসটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হলে স্থানীয় এক প্রতিবেশী নলিনী মোহন সাহা বাড়িটি ভাড়া নেন ও একটি রেস্টুরেন্ট ও বোর্ডিং হাউজ চালু করেন। নলিনী মোহন তার বড় মেয়ে বিউটির নামে নামকরণ করেন যা আজ বাংলার ইতিহাসের জনপ্রিয় “বিউটি বোর্ডিং”।

আধুনিক বাংলা কবিতার কবি শহীদ কাদরি তার বন্ধুদের সাথে এখানে সর্বপ্রথম সাহিত্য অনুষ্ঠান শুরু করেন।খুব শীঘ্রই এর শান্ত,সবুজ,ছিমছাম পরিবেশের জন্য এটি গায়ক,সাহিত্যিকদের আড্ডা ও সৃজনশীলতার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।কবি নির্মলেন্দু গুণের আত্মজীবনীতে পাওয়া যায় তিনি প্রায় ৫ বছর এখানে বসবাস করেছেন।চিত্রশিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী ,কবি শামসুর রহমান, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, রফিক আজাদ ,আল মাহমুদ সহ জানা,অজানা বহু গায়ক,লেখক,প্রকাশক,শিল্পীর নিত্যদিনের সান্ধ্যকালীন চায়ের আড্ডা ছিল হাজার স্মৃতি তে জড়িয়ে থাকা কালের সাক্ষ্মী এই স্থানটি।

বিউটি বোর্ডিং যাব কিন্তু তাদের বিখ্যাত সরাইখানা তে ঢুঁ মারবো না তা কি করে হয়? তৃপ্তি সহযোগে সেখানের ভাত,ডাল,ভর্তা,ভাজি,মাছ খেয়েছিলাম….অমৃতের মত লেগেছিল।

তখন বসন্ত উৎসব থাকায় ভবনের সামনের বাগানে বাহারী রঙের ফুলের সমারোহ বিউটি বোর্ডিং এর “Beauty” বুঝি আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছিল।সেখানকার পুরোনো আমলের সিঁড়িতে বসে কয়েকটি ছবি নেবার সময় বারবার শুধু কল্পনার টাইম মেশিনে চড়ে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।শুধুই কি ফটোগ্রাফি?প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে জেনে নস্টালজিয়া হওয়ার জন্য এর চেয়ে সুন্দর জায়গা আর হয় না। এই হলুদ ভবনে মুগ্ধতার রেশ কাটতে না কাটতে কখন যে সময় কেটে যাবে আপনি নিজেও টের পাবেন না।

১২ই ফেব্রুয়ারী,২০১৯ ;ইসলামপুর,কুমারটুলী,ঢাকা

সেই ছোট কাল থেকেই বেশ অনেকদিনের পরিকল্পনা ছিল আহসান মঞ্জিলে যাবার।অবশেষে আমার ২০ বছরের মাথায় এই স্বপ্ন পূরণ হল।গিয়েছিলাম আমার একমাত্র নিত্য ভ্রমণের সঙ্গীর সাথে।তবে এখনের আহসান মঞ্জিল আর আসল আহসান মঞ্জিল কিন্তু এক নয়।১৮ শ শতকেঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আহসান মঞ্জিলের দক্ষিণের বারান্দাসহ ইসলামপুর রোড সংলগ্ন নহবত খানাটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্থ আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মাণের সময় বর্তমান উঁচু গম্বুজটি সংযোজন করা হয়। সে আমলে ঢাকা শহরে আহসান মঞ্জিলের মতো এতো জাঁকালো ভবন আর ছিল না। এর প্রাসাদোপরি গম্বুজটি শহরের অন্যতম উঁচু চূড়া হওয়ায় তা বহুদূর থেকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত।এখনো যার আবেদন এতটুকুও কমে নি।

এই সেই স্থান যেখানে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাকালীন শাহবাগের সম্মেলনে আগত সর্বভারতীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের একটি বড় তৈলচিত্র এখানকার গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। উইকিপিডিয়ায় আহসান মঞ্জিল নিয়ে অনেক তথ্যই আছে।স্মার্ট ফোনের এই যুগে জায়গায় বসে সার্চ দিলে যে কোনো স্থান সম্পর্কে সকল তথ্য পাওয়া যায় তাই আমি বিস্তারিত কথায় যাব না। আহসা মঞ্জিল এখন পুরোটাই একটি জাদুঘর এবং ভবনটিতে মোট ৩৯টি কক্ষ।যার মাঝে ২৩ টিই গ্যালারী হিসেবে রয়েছে।

Name: Yourma Shaer Jahan

Profession: Studying B.Sc at Bangladesh University of Textiles (BUTEX)

Leave a Reply