You are currently viewing পঁচিশজন ভ্রমনকন্যার কেওক্রাডং জয়

পঁচিশজন ভ্রমনকন্যার কেওক্রাডং জয়

কেওক্রাডং! এ যেন স্বপ্নের একটা নাম, অন্তত আমার কাছে তো অবশ্যই। পাহাড়ের প্রেমে পড়েছি যখন তখন থেকেই স্বপ্ন বুনেছি কেওক্রাডং এর চূড়ায় বসে তারা ভরা আকাশ দেখার। সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মাধ্যম যখন হয়ে উঠে প্রাণের সংগঠন তখন তা হয় বাড়তি পাওয়া।

হ্যা “ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ” এর ২২ তম ইভেন্ট ছিল কেওক্রাডং অভিযান। শুধু অভিযান বললে কম হয়ে যায় এটি ছিল একটি রেকর্ড, ইতিহাসে প্রথম শুধু ২৫ জন মেয়ের কেওক্রাডং জয়ের রেকর্ড। মনে মনে চলছিল শিহরণ আর অপেক্ষা যাত্রা শুরুর।

১১ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকেই কলাবাগান বাস কাউন্টারে একে একে সমাগম ঘটতে থাকে ভ্রমণকন্যাদের। সবার চোখে মুখে উত্তেজনা, পাহাড় জয়ের নেশা। রাত ১০.৩০। ২৫ জন ভ্রমণকন্যার যাত্রা হল শুরু। হাসি গানে চলছে সময় আর বাস এগিয়ে যাচ্ছে বান্দরবনের পথে। ভোরের দিকে সবার চোখ একটু লেগে আসতেই টের পেলাম উঁচুনিচু পাহাড়ি রাস্তার ঝাঁকুনি। বুঝে গেলাম বান্দরবন শহরে প্রবেশ করছি আমরা। কুয়াশায় ঢাকা বান্দরবন শহরে আমাদের সকাল শুরু হল। একটা হোটেলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে দুইটা চান্দের গাড়িতে উঠে পড়লাম সবাই। পাহাড়ি রাস্তায় এগিয়ে চলেছে গাড়ি, গন্তব্য রুমা বাজার। পথে একবার আর্মি ক্যাম্পে সাইন করার জন্য একটু বিরতি পেয়েই গাড়ি থেকে নেমে পড়লো সবাই। সামান্য একটু উঁচু জায়গা পেয়েই দৌড়ে উঠে গেল ছবি তুলতে। এরপর আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে কুয়াশা কাটে, মিষ্টি রোদের দেখা পাই আমরা। ১১ টা নাগাদ পৌছে যাই রুমা বাজারে। একসাথে এতবড় মেয়েদের টিম দেখে সবাই অবাক! আর্মি ক্যাম্প থেকে শুরু করে বাজারের সাধারণ দোকানী সবার চোখেমুখে বিস্ময়! আর্মি ক্যাম্পে সবার নাম রেজিস্ট্রেশন করে সেখানেই সেরে ফেলি দুপুরের খাবার। পাহাড়িদের রান্না করা ভর্তা ডাল ও অমৃত মনে হয়। খাবার খেয়ে আবার ২ টা চান্দের গাড়িতে উঠে পড়ি সবাই। এবার যাত্রা কমলাবাজার। রাস্তায় প্রচন্ড ঝাঁকুনি আর ধুলায় সবার অবস্থা কুপোকাত। তবুও চারপাশের পাহাড় দেখে সবাই মুগ্ধ। রাস্তার ধুলো আর ঝাঁকুনির সাথে যুদ্ধ করতে করতে পৌছে গেলাম কমলাবাজার। এবার সবার উত্তেজনা আরো বেরে গেল কারণ পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং শুরু হবে এখানেই। উল্লেখ্য যে এই পঁচিশ জনের টিমের একজন ছাড়া সকলেই এই অভিযানে প্রথম। খাঁড়া পাহাড় বেয়ে উঠছি আমরা, সম্বল ২ জন গাইড আর হাতে একখান চিকন বাঁশ।

পঁচিশজন ভ্রমনকন্যার কেওক্রাডং জয়

প্রথম ট্রেকিং হওয়ায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল সবার ই কিন্তু মনের জোর আর উত্তেজনায় আধ ঘন্টা ট্রেকিং করে পৌছে গেলাম বগা লেকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ ফুট উপরে অবস্থিত এই লেক সম্পর্কে কৌতুহল ছিল বরাবর ই।

কয়েকজন তো লেক দেখে গোসলের লোভই সামলাতে পারেনি। এরপর সবাই ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে বের হই আশেপাশে ঘুরে দেখতে। এর মধ্যেই সন্ধ্যা নেমে এসেছে বগা লেকের পাড়ে। হঠাত আকাশে তাকিয়ে দেখি লক্ষ লক্ষ তারা। রাতভর চলে বগা লেকের পাড়ে ক্যাম্পফায়ার আর বার্বিকিউ। সাথে পাশের কটেজ থেকে ভেসে আসে গিটারের সুর। পরদিন সকালের নাস্তা করেই ২ জন গাইডসহ বেরিয়ে পড়ি কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। কেওক্রাডং সম্পর্কে যখন শুনেছি তখন ই মনে মনে একটা ছবি একে নিয়েছিলাম।

পাহাড়ি উচু নিচু পথ দিয়ে হাটছি আর মনে মনে রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম কেওক্রাডং চূড়ার কথা ভেবে। পথে একে একে বগা ঝর্ণা, শামুক ঝর্ণা আর চিংড়ি ঝর্ণা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কখনো খাদের পাশে সরু পাহাড়ি রাস্তা আবার কখনো ছোট বড় পাহাড় পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের দল। দার্জিলিং পাড়ায় পৌছে সবাই ক্লান্তিতে ভেঙে পড়লেও কেওক্রাডং এর চূড়া দেখতে পেয়ে সবাই যেন আবার শক্তি ফিরে পেল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে আবার চলা শুরু। অবশেষে ৪.৩০ ঘন্টার ট্রেকিং শেষে কেওক্রাডং এর চূড়া!! ২৫ জন ভ্রমণকন্যার কেওক্রাডং জয়ের উল্লাসে মেতে উঠে পুরো পরিবেশ। যেভাবে যাবেন: বাসে ঢাকা-বান্দরবন, চান্দের গাড়িতে বান্দরবন-রুমা-কমলাবাজার, কমলাবাজার থেকে ট্রেকিং করে বগালেক-কেওক্রাডং।

Leave a Reply