প্রথম দিন
অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো বেঁচে থেকে দুনিয়ার জান্নাত দেখব।তাই রোজার মাসে ঠিক করলাম ঈদের পর আমরা আমাদের স্বপ্নের ট্যুরটি দিয়েই ফেলব।কোন রকম ঝামেলায় যেন পড়তে না হয় তাই আমরা টিকিটগুলো ঢাকা থেকেই কেটে নিয়ে ছিলাম। আমরা ট্যুর সদস্য পাঁচজন ছিলাম। বাবলু আমাদের একদিন আগেই রওয়ানা দিল কারন ওর কোন টিকিট কাটা ছিলনা।আমরা ঢাকা থেকে গ্রীন লাইনের গাড়িতে করে বেনাপোল গেলাম।এরপর বর্ডার ক্রস করে লোকাল যানবাহনে করে কলকাতা পৌঁছালাম।তারপর সন্ধ্যা ছয়টায় দিল্লি যাবার ট্রেন জুবা এক্সপ্রেস(এসি চেয়ার) ঠিক করা ছিল।তাই আমরা নিউমার্কেটে কেনাকাটা খাওয়া দাওয়া সেরে উবার দিয়ে হাওড়া স্টেশন চলে গেলাম। আমরা ঐ সময়ে অন্যকোন ট্রেনের টিকেট না পেয়ে বাধ্য হয়ে এই ট্রেন বেছে নেই।এই ট্রেনের সিটগুলো ভাল ছিল না তাই এই ট্রেনে যাতায়াত না করাই ভাল।
দ্বিতীয় দিন
দুপুর সাড়ে তিনটায় দিল্লি পৌঁছে গেলাম আমরা।এরপর উবার দিয়ে দিল্লি জামে মসজিদ দেখে ও নামাজ শেষে আমরা দিল্লির বিখ্যাত করিমস হোটেলে খেলাম। খাবার খুবই ভাল ছিল।দিল্লি এসে লাড্ডু না খেলে কেমন দেখায়। তাই মজার লাড্ডু ও লাচ্ছি খেয়ে আমরা অটো করে লাল কেল্লা দেখতে গেলাম। রাত দশটায় আমাদের জম্মু যাবার দুরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল।তাই রেড ফোর্ট থেকে স্টেশন চলে গেলাম। থ্রি টায়ার এসি ট্রেনে বেশ আরামের ভ্রমণ ছিলো।
তৃতীয় দিন
দিল্লী থেকে দুরন্ত এক্সপ্রেস দিয়ে জম্মু যখন আমরা পৌঁছালাম তখন আর ভাল লাগছিলনা। ধ্যাত্তরী কেন যে এত সকালে পৌঁছে গেলাম! এত আরামের ঘুমটা আমার! খুব ভাল লাগল ঘুম ভেঙ্গে দেখি কোন রকম ভ্রমণ কষ্ট ছাড়াই জম্মু স্টেশন এ আমরা।তারপর জম্মু স্টেশন ঘুরে দেখা ও খাওয়া। নতুন নতুন সবই ভাল লাগে তাই এখানকার মানুষ,ট্রেন,খাওয়া দাওয়া সব ভাল লাগতে শুরু করে।শুরু হয় জীপে করে শ্রীনগর যাত্রা।এ যাত্রাপথ যতদিন বেঁচে থাকব ভুলে যাওয়া সম্ভব না।একটা কুলফি হাতে নিয়ে জীপে চেপে বসলাম আমরা পাঁচজন। জন ছবি তোলার জন্য আগেই ক্যামেরা রেডি করে রাখল।রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ছবি তুলতে তুলতে একপর্যায়ে ভাবল আর কত ছবি তুলব?জম্মু থেকে শ্রীনগর যাওয়ার সময় মনের আকাশ খুলে যায়। পাহাড়ের গা বেয়ে চলছিল আমাদের জীপ আর মুখে লাগছিল বিশুদ্ধ বাতাসের ঝাপটা।পাহাড়ের নিচে বয়ে চলেছে চিনাউ নদী।গাড়ীতে বসে দেখলাম অপূর্ব চলার পথে রয়েছে পাহাড়, ছোট ছোট ঝর্না,মাঝে মাঝে পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠেছে বাড়ী যা অনেকটা দার্জিলিং এর মত লাগছিল।বাবলু বারবার বলছিল দার্জিলিং কি এরকম?নাহ একই রকম না তবে ফ্লেভারটা আছে। শ্রীনগরের রাস্তায় মিশে আছে দার্জিলিং এর ছোঁয়া।চিনাউ নদী দেখতে দেখতে এগিয়ে চলছি আমরা। ড্রাইভারকে বারবার সবাই বিরক্ত করছিল ভাই থামান ছবি তুলব এ জায়গাটা অনেক সুন্দর।আমরা ভাবলাম সব সুন্দর এখানেই এখন ছবি না তুললে মিস হয়ে যাবে।উনি মাঝে মাঝে আমাদের পাত্তা না দিয়েই এগিয়ে চলল শ্রীনগরের পথে।আমাদের আফসোস আহা সব সুন্দর বুঝি শেষ হয়ে যাচ্ছে।সাথে এক ইন্ডিয়ান ছিল সে আমাদের কান্ড দেখে মিটমিট করে হাসছে আর আমি ভাবছি গাধাটা প্রকৃতি না দেখে ঘুমাচ্ছে!!যতই এগিয়ে যাচ্ছি অবিশ্বাস্য চোখ সবকিছুই মেনে নিতে পারছিলনা।কি করে এত সুন্দর হতে পারে চলার পথ।আর আমরা নতুন পথিকরা ভাবলাম বোধহয় কাশ্মীর দেখা শেষ। নাহ যখন ভাবলাম শেষ তখন শুরু হল কাশ্মীরী গন্ধ। গায়ে বাতাস লাগছিল কেমন যেন হিম শীতল আর সবুজের রং গাঢ় হয়ে ধরা দিল বুঝলাম এতক্ষণে যা দেখে এলাম তা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের শুরু। বুঝতে পারলাম অনুভূতি দিয়ে কাশ্মীরের কাছাকাছি আমরা।শ্রীনগর চলে এলাম আমরা।নানারকম ফলের সমাহার নিয়ে এলো হকাররা। চেরী,আলুবোখরা,আপেল,এপ্রিকট এসব বিক্রি করছে। লোভ সামলাতে না পেরে চেরী খাওয়া শুরু করলো সবাই। শ্রীনগর এসে হোটেল ক্যাসেলে আয়েস করে স্বপ্ন দেখা শুরু যে পরদিন ভোর থেকে কাশ্মীর ঘুরে দেখ শুরু করবো।
চতুর্থ দিন
যাবার কথা ছিল পেহেলগাম,আরু ভ্যালী,বেতাব ভ্যালী।হলো না যাওয়া। কাশ্মীরে ঐ জায়গায় ঝামেলা চলছিল।কি আর করা খাওয়াদাওয়ার ভাই বলল কাছেই একটা জায়গা আছে সেখানে যেতে পারেন। যার নাম দুধপাতরী।আমরা চললাম নতুন জায়গায় যেখানে পর্যটকদের আনাগোনা কম।যাচ্ছি আর দেখছি স্বর্গভূমি কত অপূর্ব গোছানো শহর। কাশ্মীরের বাড়ীগুলো খুলে রেখেছে সৌন্দর্যের ডালি। ডুপ্লেক্স বাড়ীগুলো মন কেড়ে নেয়। অন্যরকম নকশা করা কাঠের বাড়ী সাথে রয়েছে আধুনিক রড সিমেন্টের ছোঁয়া।বাড়ীর ছাদগুলোর রয়েছে বিশেষত্ব কারন বরফ যেন নিজে থেকে বাড়ীগুলো ক্ষতি করতে না পারে রয়েছে তার ব্যাবস্থা। ছাদগুলোর কারনে বাড়ীগুলো আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দেয়। দুধপাতরী যেতে যেতে কখন যেন পেহেলগাম যাবার কষ্ট হাওয়ায় মিশে গেল।ড্রাইভার বলল এখানে গুলমার্গ আর পেহেলগাম একই সাথে পাবেন।সত্যি কথা কাশ্মীরের এক ইঞ্চি জায়গা নেই যেটা অসুন্দর। সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাশ্মীর।যেতে যেতে হতবাক হয়ে গেলাম।বহুদূর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে ঝর্ণাধারার পানি আর পাইন বন।যতটুকু পথ যাচ্ছিলাম দুধপাতরী ততটুকু ছিল পাইন ঘেরা আর ঝর্ণার কলকল শব্দ ও সবুজের মোড়ানো কার্পেট।আমাদের প্রিয় ড্রাইভার আয়াজ ভাইয়ের গাড়ী চলল রাস্তা দিয়ে আর পাশে ঝর্ণাধারা যার শেষ দেখতে পারিনি আর পাহাড় বেয়ে নিপুনভাবে বুনানো রয়েছে ছোটবড় পাইন গাছ। দুধপাতরী এতটাই সুন্দর যা বুঝিয়ে দেয় আমি অনন্য।বুনো সুন্দর ঘিরে ধরে আমাদের। ঝর্ণা এত বেশি খরস্রোতা যা হয়ত আমি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি কারন আমি বাংলাদেশে অনেকগুলো ঝর্ণা দেখেছি যার সাথে এর কোন মিল নেই।ঠাণ্ডা পানি খেয়ে নিলাম আর চেষ্টা করলাম পা ডুবিয়ে শান্তি অনুভব করতে পারলামনা কারন পানি এতটাই ঠাণ্ডা পা অসার হয়ে যাচ্ছিল।যাক শান্তি পেলাম দুধপাতরী দেখে ও অনুভব করে।
#পনি রাইড
দুধপাতরী যখন পৌঁছালাম তখন বেশ কয়েকজন আমাদের ঘিরে ধরল পনি রাইড করার জন্য। আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম পনি রাইড করবনা তাই ওদের পাত্তা দিলামনা।কিন্তু ঘোড়াগুলোর মায়া মায়া দৃষ্টি আর পরিচ্ছন্ন দেখে মন চাইল করেই ফেলি। আবার কিছু কিছু ঘোড়া সাজানো রয়েছে। আমি উঠলাম ফুল দিয়ে সাজানো ঘোড়ায়।মনে মনে ভাবনা ও ভয় দুটোই কাজ করছে যদি পড়ে যাই।তবু ভয়কে জয় চলল আমাদের পাঁচজনের ঘোড়ার পাল।ঘোড়ায় উঠে যখন ধীরে ধীরে পাহাড়ের উপরের দিকে যাচ্ছিলাম তখন ভয় পালিয়ে নতুনকে পাওয়ার অনুভূতি পেয়ে বসল।দুধপাতরী পৌঁছেই মনে হল পৃথিবীর সব স্বর্গ সুন্দর এখন আমার কাছে।উপরে দিকে যতই উঠছি ততই মনে হচ্ছিল দুধপাতরী তার স্বরূপে ধরা দিচ্ছে।আমাদের উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। সবাই নিজেই ঘোড়া চালিয়ে নিচ্ছে। আর সবার চেহারায় নতুন করে বাদশাহী ভাব যোগ হয়ে গেল।মনে হচ্ছে পাইক পেয়াদা থাকলে ভাল হত।বুঝলাম শাহাজাদী হলে কি ভালই না হত!ইস ঘোড়া চালিয়ে দূর দূরান্তে উড়ে শাহাজাদাকে খুঁজে নিয়ে আসতাম। আপাতত রাজ্যহীন শাহাজাদী জনকে নিয়েই পথ চলতে শুরু করল।পাহাড়ের উপরের দিকে ঘোড়াগুলোর পথ চলা দেখে অবাক হয়ে গেলাম।কি সুন্দর রাস্তা চেনে ওরা এ জন্যই রাজারা এত রাজ্য জয় করতে পারতো।সাথে একটা তলোয়াড় দিলেই সোনায় সোহাগা লাগত।পাহাড়িয়া পথ ধরে চলে গেলাম বজরঙ্গী ভাইজানের সুটিং স্পট। কি অপূর্ব রূপ তার যে দেখেছে শুধুমাত্র সেই বুঝবে কি যে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।উপর থেকে নিচের মানুষগুলো ও ঝর্ণাধারার স্রোত দেখা যাচ্ছে সাথে সবুজের ছোঁয়ায় মন মাতানো প্রকৃতি খেলা করছে আমাদের সামনে।কিছু পাহাড়ে রয়েছে বেগুনী জংলী ফুল ও ছোট ছোট হলুদ ফুল যেন সবুজের মোড়ানো কার্পেটে বেগুনী ও হলুদের নিপুন কারুকাজ।মন চায় গড়াগড়ি খাই।তারপর চলে গেলাম গুম্ফা গুহার দিকে।ভেবেছিলাম গুম্ফা গুহায় আলুটিলার মত হাঁটব। গুম্ফা দেখে চোখ ছানাবড়া বলল এ গুহায় একবার যে যায় সে আর আসেনা।ছোট একটি মুখ রয়েছে এ গুহার পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে নেমে গেছে এটি কেউ জানেনা এর শেষ কোথায়।তারপর অন্য আরেকটি সুন্দর রাস্তা ধরে নেমে চলে এলাম আমরা। এরপর কাশ্মীরী ড্রেস পরে ছবি তুলে নিলাম পাথর দিয়ে সাজানো ঝর্ণায়।আর ছবি তুলে নিলাম রাস্তায় যার দুদিকে পাইন ঠায় দাঁড়িয়ে।আর চোখ দুটো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চির সুন্দরের দিকে।
#ডাল লেক
মোঘল দরবারে কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী খাবার ওয়াযওয়ান খেয়ে পেট পূর্তি করে আমাদের যাত্রা শুরু হলো ডাল লেকের দিকে।বাংলাদেশে থেকে অনেকবার স্বপ্ন দেখেছি ডাল লেকে হাউসবোটে থাকব সারা রাত লেকের পারে কাটাব চাঁদ ছোঁয়া স্বপ্ন বুনবো।এখন যাচ্ছি ডাল লেকে অনুভূতি অন্যরকম।আমাদের গাড়ী থামল ডাল লেকে। আমি মুহূর্তের মধ্যে দৌড় দিয়ে লেকের পাড়ে চলে গিয়ে দু চোখ ভরে লেকটা দেখলাম আর মনে পড়ে গেল বগা লেকের কথা।লেকটার এক পাশ ঢেকে রেখেছে পাহাড় এক পাশে নগর আর পার্ক। ডাল লেক ঘিরে খুব সুন্দর বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।কতগুলো হাউজ বোট আর অনেকগুলো ঘাট রয়েছে। 9 ও 10 নং ঘাট হাউসবোট গুলো মোটামুটি সহজলোভ্য। হাউসবোটগুলো লেকের সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ করেছে। একেকটি হাউজবোটকে মনে হচ্ছে একেকটি রাজার বাড়ী।ভাসমান রাজার বাড়ীগুলোতে থাকার জন্য রয়েছে আধুনিক সকল ব্যাবস্থা।আর শিকারায় করে কাশ্মীরী বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করছে ওনারা।শিকারায় চড়তে চড়তে এ ভাসমান দোকানগুলো দেখে অন্যরকম লাগে।পুরো ডাল লেকটাই যেন অসাধারণ রূপ ধারন করে।এটি সকালে এক রকম দুপুর বেলায় আরেক রকম আর বিকালের ডাল লেক ছেড়ে কারো আসতে ইচ্ছে করবে না।বিকালে লেকের পানিতে পড়ে সবুজের ছায়া মনে হয় লেকটাই সবুজ।ওহ যখন সন্ধ্যা নামে তখন ধারন করে অন্য রূপ।পুরো লেকটি আলোয় স্বজ্জিত হয়ে যায় হাউজবোটগুলো তারার মত জ্বলতে থাকে।লেকের ধারে সারারাত কাটানোটা সৌভাগ্যের বিষয়।লেকের মাঝে ছোট একটি পার্কের মত আছে ওখানে কাশ্মীরী ড্রেসে ছবি তোলা যায়।পার্কটিতে দাঁড়িয়ে পুরো লেকটা দেখলাম।লেকের চারপাশে স্ট্রিট ফুড ও কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী জিনিস পাওয়া যায় এমন দোকানগুলো রয়েছে।বিকাল থেকেই লোকজনের আড্ডায় সেটি হয়ে যায় সরগরম আর ভোরে ধরা দেয় স্নিগ্ধ নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ।ডাল লেক দেখে রাতে শান্তির ঘুম দিলাম। সকাল আটটার দিকে আমাদের ঘুম থেকে উঠার কথা। উদ্দেশ্য সোনমার্গ জিরো পয়েন্ট দেখবো।
পঞ্চম দিন
সকাল বেলায় হোটেলের সামনে কাশ্মীরের রাস্তাঘাট আমাদের নজর কেড়ে নিল।হোটেলের সামনের জায়গাটা খুবই সুন্দর অনেকগুলো ফুল গাছ ও নাশপাতি গাছ আছে। রাস্তা ও হোটেলের লবিতে ছবি তুলে নিলাম। পুরো শহরটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দিয়ে ঢাকা।এখানকার লোকজন খুব আন্তরিক আর ঘুরে বেড়ানোর জন্য তেমন বেগ পেতে হয় না ড্রাইভারদের ব্যবহার খুবই ভাল।শহরটা ছেড়ে চলে যাব ভাবতেই কষ্ট চেপে বসল।তবু গাড়ীতে বসলাম আর চলতে শুরু করলাম।কাশ্মীরের ঠাণ্ডা হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে বেড়াতে চলে এলাম হযরত বাল মসজিদ।এখানে রয়েছে মহানবী (সাঃ) এর চুল মোবারক। মসজিদের সামনে অনেকগুলো পায়রা বসে পাহারা দিচ্ছে।খাবার দিলেই ওরা কুটকুট করে খেয়ে নেয়।পায়রা উড়ালাম ও খাওয়ালাম আর সাথে ছবি তোলা তো আর মিস নাই। খুব সুন্দর কারুকাজ করা সাদা রংয়ের মসজিদ যা মনে দাগ কাটবে।1623 সালে মুঘল সম্রাট শাজাহানের আমলে এটি তৈরি করা হয়।মসজিদ দেখে আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। সকালের নাস্তা তখনও করা হয়নি।আয়াজ ভাই গাড়ী থামাল বলল নাস্তা করে নিন। নামলাম গাড়ী থেকে তাকিয়ে আছি সিন্ধুর দিকে। নাস্তা তাও সিন্ধু নদীর পাড়ে এটা কল্পনাতেও ছিল না। রেস্টুরেন্টটি করা হয়েছে সিন্ধুর পাড়ে। রয়েছে আপেল ও নাশপাতি গাছ। ফ্রি ফল পেড়ে খাচ্ছে পর্যটকরা।নদীর কাছ ঘেঁষে চেয়ার টেবিল সাজানো আছে আর ফুলের বাগান আছে। আমরা সিন্ধুর পাড়ে ছবি তুলতে গেলাম দেখলাম কি প্রমত্তা নদী! ঢেউ দেখেই বেশামাল অবস্থা মনে হল যেন সাগর দেখছি। সিন্ধুর সাথে কথা হল তোমাকে আমি আগেও দেখেছি জেনেছি তবে তা বইয়ের পাতায়। খোলা আকাশের নিচে সামনে বাগান আর পাশে বয়ে চলেছে নদী আর চারপাশ ঘেরা ঘন সবুজ পাহাড় এমন একটা পরিবেশে খেতে পারাটা সত্যিই আনন্দের।খাওয়া শেষে খুব সুন্দর একটা ব্রিজের উপর দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম।সিন্ধু দেখতে দেখতে আর পাহাড়ের উপরে ধীরে ধীরে সূর্যের আলো পড়ায় গাঢ় সবুজ ও হালকা সবুজ আভা তৈরি হয়েছে। গাড়ী রাখা হল একটি আপেল বাগানে।বাগানটা ঘুরে দেখার সময় পেলাম।নাশপাতি ও আলু বোখারা গাছ ও রয়েছে। খুব ছোট ছোট গাছ অথচ ফলে নুয়ে পড়ছে এ যেন আল্লাহর রহমত।বাগানে ঢুকে উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম।আফসোস ফলগুলো পাকেনি সবগুলোই কাঁচা।সেপ্টেম্বরের দিকে ফল পাকে। মজার ব্যাপার হল বাগানে ওরা পেকেটজাত করে ফল বিক্রি করে আর দাম খুবই কম।আমরা আলুবোখরা ও আপেল কিনে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।দেখতে দেখতে সিন্ধুর সাথে প্রেম হয়ে গেল।বার বার মন চাচ্ছে সিন্ধুর বুকে ঝাপিয়ে পড়ি।এমন সময় গাড়ী থামল কাশ্মীরী শালের দোকানে।কিছু শাল কিনলাম আর দেখলাম আসল পশমিনা।খুব পাতলা শাল সুনিপুণ কারুকাজ করা আর দামটাও বেশি।পাঁচ হাজার এমনকি পন্ঞ্চাশ হাজার রুপিরও পশমিনা রয়েছে। আরও দামীটা দেখার সাহস আমাদের আর হল না।
#রাফটিং
কেনাকাটা শেষে গাড়ী কিছুক্ষন যেতে না যেতেই দেখলাম সিন্ধুর বুকে রাফটিং এর ব্যবস্থা।আমিতো বেজায় খুশি যাক প্রেমটা বোধহয় জমে যাবে। পাঁচজনের রাফটিং 2000 রুপি।সিন্ধুকে পাবার ব্যবস্থা হয়ে গেল। রাফটিং করার জন্য কতকিছু পরানো হল লাইফ জ্যাকেট,হেলমেট আরো কি একটা ছিল।এতকিছু পরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলামনা।শুরু হবে রাফটিং দুজন নেপালী ছিলেন সাথে যারা আমাদের বলে দিলেন ঢেউ এলে কি করতে হবে। কখন উঁচুতে বসতে হবে আর কখন নিচুতে।উনি গায়ে পানি ছিটিয়ে হাসি দিলেন।প্রতিটা মানুষকেই হাসিতে সিন্ধুর মতই সুন্দর লাগে। ওনাকে ভাল লাগতে লাগতে এগিয়ে যাচ্ছি কি এক উত্তেজনা ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের। একবার আমাদের পাশ আরেকবার অন্যপাশে ঢেউ আসে। । মুখে এসে লাগছে পানির ঝাপটা।খুব সুনিপুণ কৌশলে রাফটিং করানো হয়। প্রবল ঢেউ আমাদের আনন্দ হাজার গুন বাড়িয়ে দিল।খুব দ্রুত তিন কিঃমিঃ সিন্ধুর পথ শেষ হয়ে আমার প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটে গেল। ভালবাসার সিন্ধু ভিজিয়ে দিল।ওর ভালবাসার স্মৃতি চিহ্ন ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে আবার সোনমার্গ যাবার জন্য তৈরি আমরা।
#সোনমার্গ
সবার কাছে শুনেছি সোনমার্গ গেলে সোনা মেলে আর মেলে গ্লাসিয়ার ও বরফ যা আমার আগে দেখা হয়নি। কল্পনায় সোনমার্গ তোমার কানে কি সোনার দুল, গলায় আমার পছন্দের হার আর কপালে লাল টিপ!যেহেতু তুমি সোনমার্গ সোনাটোনা কিছু ছিল মনে হয় কল্পকাহিনীতে।নাকি এখানে মজুত করা রয়েছে কোন এক সোনার খনি।সোনমার্গ নামটা আমার ভেতরে উৎকন্ঠা তৈরি করে রেখেছে। কত চিন্তা বরফে পা দিলে কি ডুবে যাব?আর চোখের চাহনিতে এখনও আমার প্রেম সিন্ধুর সাদা জল আর ঢেউ।সাথে আছে প্রিয় সবুজ পাহাড় যাদের মনে হয় অরণ্য। মনে হচ্ছে গভীর কোন বন রয়েছে পাহাড় চূড়ায়।সোনমার্গ কল্পনা করতে করতে গাড়ী থেমে গেলো।আইয়াজ ভাই বললেন নামুন মেডামজী আর সাথে সাথে পরে নিলাম হ্যান্ড গ্লাভস,জ্যাকেট,কানটুপি ও জুতা। এতক্ষণের কল্পনার বরফ চলে এল চোখের সামনে।আমরা নামার সাথে সাথে শুরু হল বৃষ্টি। সাধের বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্যামেরা রেখে শুধু মাত্র মোবাইল নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। এখানে কটেজ আছে জানা ছিলনা। তাই দেখে বেশি ভাল লাগল।আমরা যা আশা করিনা তা পাওয়ার আনন্দ অনেক বেশি হয়।চারপাশে পাহাড়গুলো আর সমতলে কটেজগলো দাঁড়িয়ে আছে পর্যটকদের আনন্দ আর আরাম দেয়ার জন্য।আফসোস হল ইস এখানে যদি রাতে থাকতাম!হেঁটে হেঁটে সোনমার্গের সাদা কার্পেটে চলে গেলাম।অদ্ভুত অনুভূতি সবুজ কার্পেটে রাখা পা চলে এল সাদা কার্পেটে।এখানে বরফে উঠার জন্য কাঠের তৈরি গাড়ি রয়েছে। এ ছোট গাড়ীগুলো মানুষ চালিয়ে নেয়।আমি যখন উঠেছিলাম তখন খারাপ লাগছিল আহারে একজন মানুষ আমাকে টেনে উপরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে বরফ আর বরফ অথচ ওনার কষ্ট হচ্ছে। নামার সময় দারুন অনুভূতি মনে হল বরফে স্লিপার দিচ্ছি।এখানে স্কেটিং করা যায় আর পনিতেও চড়া যায়।যারা রাতে থাকে তারা সোনমার্গ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে।কারন সূর্য রশ্মি সোনমার্গকে লাল ও সোনালী আভায় নতুন রূপ দেয়।পর্যটকদের জন্য সোনমার্গ একটি কাঙ্ক্ষিত জায়গা।এখানে তেমন কোন লোকবসতি নেই। শুধুমাত্র যারা পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত তারাই থাকে।সোনমার্গ প্রতিনিয়ত রূপ পাল্টায়।এখানে আবহাওয়া একই রকম থাকেনা।সোনমার্গকে লাদাখ যাওয়ার গেইট ওয়ে বলা হয়। সবুজ পাহাড় ও অক্সিজেনে ভরপুর কাশ্মীর ছাড়ার কষ্ট আর মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার আনন্দ মনের ভেতর তৈরি করল সুখ আর কষ্টের মিশেল অনুভূতি। স্বর্গীয় ভ্রমণ কাশ্মীর মনের কোঠায় রয়ে গেল চিরদিনের জন্য।